সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক:
রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে মুমিনের দোয়ারে হাজির হয় শাবান মাস। শাবানে মুমিন জীবনে লাগে আমলের দোলা। আমলের সতেজ সৌরভে আন্দোলিত হয়ে উঠে মুমিনের দিনরাত। কাক্সিক্ষত রমজানবরণে তার জীবনজুড়ে শুরু হয় ইবাদত-আমলের পাঠ। বৃদ্ধি পায় আল্লাহর তাসবিহ পাঠের আয়োজন ও কোরআন তেলাওয়াতের মধুর স্বর। শাবানজুড়ে চলে রমজানের প্রস্তুতি। শাবান হিজরি চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাস। শাবান শব্দের অর্থ দূরে ও কাছে, মিলন ও বিচ্ছেদ। শাবানের আরেকটি অর্থ হলো মধ্যবর্তী সুস্পষ্ট। যেহেতু এ মাসটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী, তাই এই মাসকে শাবান মাস নামকরণ করা হয়।
রাসুল (সা.) নফল রোজা রাখতেন
মুসলমানের ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ। রমজান ভিন্ন অন্য কোনো রোজা মুসলমানের ওপর ফরজ নয়। তবে অন্য মাসে ও বিশেষ দিনে নফল রোজা রাখায় সওয়াব রয়েছে। রাসুল (সা.) নফল রোজা রাখতেন। সাহাবিদের নফল রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করতেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে যে পরিমাণ নফল রোজা রাখতেন, অন্য কোনো মাসে এ পরিমাণ রোজা রাখতেন না। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা কোনো মাসে রাখতেন না। তিনি পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন এবং বলতেন, তোমাদের মধ্যে যতটুকু সামর্থ্য আছে ততটুকু (নফল) আমল করো, কারণ তোমরা (আমল করতে করতে) পরিশ্রান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা (সওয়াব) দান বন্ধ করেন না। নবী করিম (সা.)-এর কাছে সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় নামাজ ছিল তা-ই, যা যথাযথ নিয়মে সর্বদা আদায় করা হতো, যদিও তা পরিমাণে কম হতো এবং তিনি যখন কোনো (নফল) নামাজ আদায় করতেন পরে তা অব্যাহত রাখতেন।’সহিহ বোখারি : ১৯৭০
বরকত হাসিলের দোয়া করা
যারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন, আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন। তাদের প্রতি খুশি হন। আল্লাহ মানুষকে তার কাছে বেশি বেশি প্রার্থনার আদেশ দিয়েছেন। কারণ প্রার্থনা হচ্ছে ইবাদতের মূল। হজরত রাসুল (সা.) প্রতিটি কাজে সব সময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। আল্লাহর সাহায্য চাইতেন। তিনি রজব ও শাবান মাসে বেশি বেশি বরকত হাসিলের দোয়া করতেন। রমজান মাসে ইবাদত করার সুযোগ ভিক্ষা চাইতেন। তিনি রজব ও শাবান মাসে এ দোয়া বেশি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাজান।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন।’মুসনাদে আহমাদ : ২৫৯
কোরআন তেলাওয়াত করা
রমজানের প্রস্তুতিপূর্বক সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী মনীষীরা শাবান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। মূলত রমজানের বরকত হাসিলের জন্য তারা কোরআনের সঙ্গে লেগে থাকতেন। কোরআন পাঠে রয়েছে আল্লাহর বিপুল সন্তুষ্টি ও রহমত লাভের পাথেয়। কোরআনের প্রতিটি অক্ষর উচ্চারণে রয়েছে সওয়াব। কোরআনের বাণীর চেয়ে মধুর ও প্রিয় বাণী আল্লাহর কাছে নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর এটি এমন কিতাব, যা আমি বরকতময় করে নাজিল করেছি, সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’সুরা আনয়াম : ১৫৫
সদকা করা
দান-সদকা বিপদাপদ দূর করে। সম্পদে বরকত আনে। জীবনে পবিত্রতা আনে। ইবাদতে স্বাদের সন্ধান দেয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় দান-সদকা করতেন। নিজে না খেয়ে মানুষকে খেতে দিতেন। তার দরবারে এসে কেউ খালি হাতে ফিরে যেত না। শাবান মাসে নবীজি (সা.) দান-সদকা বাড়িয়ে দিতেন। সাহাবিদেরও দান-সদকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। যেন শাবানের দানের ধারাবাহিকতা রমজানে গিয়ে সবুজ প্রাণ ফিরে পায়। তুমুল গতির সঞ্চার হয়।
কিবলা পরিবর্তন হয়
নামাজ ফরজের পর থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতেন মুসলমানরা। তবে নবী মুহাম্মদ (সা.) হৃদয় দিয়ে চাইতেন, কাবাঘর হোক মুসলমানদের কিবলা। এজন্য তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে বারবার আকাশের দিকে তাকাতেন। মনের আকুল প্রার্থনা ব্যক্ত করতেন। প্রার্থনার ১৬ মাস পর বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে কাবাঘর কিবলা হিসেবে ঘোষিত ও নির্ধারিত হয় এ মাসে। ইরশাদ হয়েছে, ‘বারবার আপনার আকাশের দিকে মুখম-ল আবর্তন আমি অবশ্যই লক্ষ করি। সুতরাং কিবলার দিকে আপনাকে প্রত্যাবর্তন করে দেব, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। অতএব আপনি মসজিদুল হারামের (কাবাঘর) দিকে চেহারা ঘোরান। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, ওই (কাবা) দিকেই মুখ ফেরাও।’সুরা আল বাকারা : ১৪৪
মুক্তির রজনী
শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী শবেবরাত। এই রাতে আল্লাহতায়ালা সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন। বান্দাকে ডাকতে থাকেন। বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন আল্লাহর কাছে পেশ করার আহ্বান করেন। হাদিসে এসেছে, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে, তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়ো, দিনের বেলা রোজা রাখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, আমার কাছে কোনো গুনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে মুক্তি দেব। আছে কী এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফজর পর্যন্ত।’ইবনে মাজাহ : ১৩৮৮
ভয়েস/আআ